আমাদের নতুন প্রজন্মের একটি বদ্ধমূল ধারণা আজ আমরা সভ্যতার শিখরে পৌঁছে গেছি। যেন অতীতের সভ্যতাগুলো আজকের এই সভ্যতার কাছে কিছুই না! আবার হয়তো ভেবে নিই আমাদের নগর কেন্দ্রিক সভ্যতার বাহিরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, উপজাতি অথবা বন্য মানুষেরা সভ্যতার মানদণ্ডে ঢের পিছিয়ে।
আজকের এই সভ্যতা যে আদৌতে কোনো সভ্যতাই নয় সেটা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সত্যজিৎ রায়, তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘আগন্তুকে’। ছবির প্রধান চরিত্র মনোমোহন মিত্র বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন। অত্যন্ত সাধারন ঘটনার মধ্য দিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে সভ্যতার আড়ালে চলমান অস্থিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, হতাশা ও মানবিক বিপর্যয়কে উপস্থাপন করেছেন সত্যজিৎ রায়।
ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র মনোমোহন মিত্রের সাথে পৃথ্বীশ সেনগুপ্তের তর্কযুদ্ধ দেখে বিস্ময়ে মন্ত্রমুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। মনমোহন মিত্র মনে করেন আজকের এই সভ্যতা এক বিরাট ভাঁওতাবাজি। হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জ দিয়ে নিজের দেহে ভয়ঙ্কর মাদকরস চালান দিয়ে সমনকে সমন জারি করছে বিশ্বের লক্ষ্য তরুণ, প্রযুক্তির উৎকর্ষে আজ একটি বোতাম টিপেই বোমার আঘাতে মেরে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, নিশ্চিন্ন হচ্ছে শহর, এগুলোকে সভ্যতা বলে মানেননা তিনি।
আজকে সবচাইতে সভ্য সাজা মানুষগুলোই আধুনিক অস্ত্র দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করছে, এদের থেকে বরং নরমাংসভোজী জংলীরা বেশি মানবিক। মূলত বর্তমান বিশ্বের মত মানবিক বিপর্যয় পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো হয় নি, এত বড় অসভ্যতাও ব্রহ্মাণ্ড আগে কখনো দেখেনি।