জামিন কি?
মূলত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি কোনো অপরাধের আভিযোগ থাকে এবং তিনি যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে থাকেন অথবা তাকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে, তবে পরবর্তি সময়ে কোর্টে হাজির হবার নিশ্চয়তা স্বরূপ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে অস্থায়ীভাবে মুক্তি লাভ করাকে জামিন বলা যেতে পারে।
জামিন কে দিতে পারে?
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ এবং ৪৯৭ অনুসারে শুধুমাত্র কোর্ট কিংবা পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইন চার্জ কোনো ব্যক্তিকে জামিন দিতে পারেন। কোনো অবস্থাতেই একজন পুলিশ কনস্টেবল জামিন দিতে পারেন না।
কখন জামিন প্রয়োজন হয়?
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের আসামী হন কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে সেক্ষেত্রে তার জামিন প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী হলে সেক্ষেত্রেও একজন জামিন চাইতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৭ অনুযায়ী জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অসুস্থতা, বয়স্ক হওয়া এগুলোও জামিন চাওয়ার কারন হতে পারে।
কোন কোন ক্ষেত্রে জামিন দেয়া বাধ্যতামূলক?
বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে দুই ধরনের অপরাধের কথা বলা হয়েছে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে। একটি হলো জামিনযোগ্য অপরাধ এবং অপরটি হলো জামিন অযোগ্য অপরাধ। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৬ মূলত জামিন যোগ্য অপরাধ এবং ধারা ৪৯৭ জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন দেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বিতীয় তফসীলে বলা আছে কোনো অপরাধ জামিন যোগ্য কি না। যদি উক্ত তফসীল অনুযায়ী কোনো অপরাধ জামিনযোগ্য হয় তবে আদালত জামিন দিতে বাধ্য থাকবে। জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। মিয়া নুরুদ্দীন বনাম রাষ্ট্র (২০১৬) মামলাতে বলা হয়েছে জামিন যোগ্য মামলার ক্ষেত্রে একজন নাগরিকের জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার। যদিও অভিযোগের ধরন গুরুতর হয়, তবুও আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন আবেদন বাতিল করবেন না এবং জামিন শুনানি অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষেই করবেন।
তবে কিছু অপরাধ আছে যেগুলো জামিন অযোগ্য। এইসব ক্ষেত্রে কোর্ট জামিন দেয় না। তবে তারা চাইলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জামিন দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৭ অনুযায়ী জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন পাওয়া নাগরিকের অধিকার নয় বরং এটা কোর্টের বিবেচনার বিষয়। বাচ্চু শেখ বনাম রাষ্ট্র (১৯৯৯) মামলাতে বলা হয়েছে, অ-জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে কোর্ট জামিন দিতে চাইলে তাদের স্বীদ্ধান্ত অবশ্যই যৌক্তিক এবং জুডিশিয়াল হতে হবে। অযৌক্তিক কিংবা আরবিট্রারি কোনো স্বীদ্ধান্ত তারা দিতে পারেন না।

জহিরুল হক তাঁর ‘ল এন্ড প্রাক্টিস অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর’ বইয়ে বলেছেন, “অ-জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন দেয়ার সময় কোর্ট অবশ্যই প্রতিটি মামলার প্রকৃত ঘটনা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিবেন। এসময়ে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে অপরাধের গুরুত্বও বিবেচ্য হবে। যদি কোর্টের নিকট এরূপ প্রতীয়মান হয় যে, অপরাধী পালিয়ে যেতে পারেন অথবা সাক্ষীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে প্রমাণাদি টেম্পারিং করতে পারেন, তবে কোর্ট জামিন প্রদান থেকে বিরত থাকবেন।”
ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৭ অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো অপরাধ করেন যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে, সেই সকল ব্যক্তিকে সাধারনত জামিন দেয়া হয় না। তবে এই ধরনের অপরাধীরাও অনেক সময় জামিন পেতে পারেন। যদি কোনো ব্যক্তির বয়স ১৬ বছরের কম হয় কিংবা তিনি নারী হন তবে তিনি এই ধরনের অপরাধ করার পরেও জামিন পেতে পারেন। এছাড়া অসুস্থ বা, অক্ষম ব্যক্তিকেও কোর্ট জামিন দিতে পারেন।
আগাম জামিন কি?
ইতিমধ্যেই আমরা জামিন কি এবং কখন আমাদের জামিন প্রয়োজন তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো আগাম জামিন সম্পর্কে। অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যে কিংবা অন্য কোনো কারনে ব্যক্তির বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হতে পারে। এই ধরনের বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পূর্বেই আদালত জামিন দিলে সেটাকে আগাম জামিন বলে।
মূলত হাইকোর্ট ডিভিশন এবং কোর্ট অব সেশনস যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। যদিও সুস্পষ্ট ভাবে বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধিতে আগাম জামিন সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে ধারা ৪৯৮ অনুযায়ী আগাম জামিনের বিষয়টি দেখা হয়ে থাকে। এই ধারা বলে হাইকোর্ট ডিভিশন এবং কোর্ট অব সেশনস কোনো ব্যক্তিকে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ক্ষমতা উপভোগ করে থাকেন।
একজন ব্যক্তি যদি জামিন অযোগ্য অপরাধের দায়েও অভিযুক্ত হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রেও কোর্ট এই ধারা বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আগাম জামিন প্রদান করতে পারেন। ধারা ৪৯৭ অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো অপরাধ করেন বলে বিবেচিত হন, যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে, তবে তারা সাধারনত জামিন পান না। কিন্তু তারাও ধারা ৪৯৮ বলে জামিন পেতে পারেন। ধারা ৪৯৭ এর আইনগত সীমাবদ্ধতা এক্ষেত্রে কোনো বাঁধা হিসেবে বিবেচিত হয় না।
ধারা ৪৯৮ অনুযায়ী শুধুমাত্রে বিশেষ এবং ব্যতিক্রম (special and exceptional) ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদালত আগাম জামিন প্রদান করে থাকে। যেহেতু, কোর্ট অব সেশনস এবং হাইকোর্ট ডিভিশন আগাম জামিন প্রদান করে থাকে, তাই এখানে প্রশ্ন আসতে পারে কোন কোর্টে আগে জামিন আবেদন করতে হবে। এই বিষয়ে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। নীতি অনুযায়ী কোর্ট অব সেশনস-এ আগে আবেদন করা উচিত, কিন্তু এটা করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাদেশের প্রাকটিস অনুযায়ী দেখা যায়, প্রায় সবাই আগাম জামিনের জন্য প্রথমেই হাইকোর্ট ডিভিশনে আবেদন করে থাকেন।
কোনো ব্যক্তিকে আগাম জামিন নিতে হলে অবশ্যই কোর্টে উপস্থিত থাকতে হবে। আদালত যদি সন্তুষ্ট হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার থেকে পলায়ন করছেন না, সেক্ষেত্রে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারে। প্রবীর কুমার চৌধুরী বনাম রাষ্ট্র (১৯৯৯) মামলায় বলা হয়েছে, “চার্জশিট দাখিল এবং আদালত কর্তৃক সেই অপরাধ আমলে নেয়া হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই বিচারিক আদালতে হাজির হতে হবে। চার্জশিট দাখিল করা হলে আগাম জামিন আর বহাল থাকে না।” যদি কোনো ব্যক্তি হাইকোর্ট ডিভিশনে আগাম জামিনের আবেদন করে, সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট জামিন আবেদন মঞ্জুর করতে পারে আবার জামিন না দিয়ে আভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশের কাস্টোরিতে দিতে পারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
আগাম জামিন প্রদানের ক্ষমতা খুবই সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সব মামলার ক্ষেত্রে আগাম জামিন প্রদান করা হয় না। বেলায়েত হোসেইন শরীফ বনাম রাষ্ট্র (১৯৯৮) মামলাতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র তুচ্ছ কারনে পুলিশের হাতে অপ্রয়োজনীয় হয়রানি এবং মানহানিকর অবস্থা থেকে পরিত্রান দেয়ার জন্য আগাম জামিন প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত রাজনৈতিক পরিকাঠামো ব্যবহার করে অনেক সময় পুলিশের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধী মত কিংবা যেকোনো সাধারন মানুষকে হয়রানি করার সুযোগ থাকে। সেখান থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার জন্য আগাম জামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একই মামলায় আরো বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়ে থাকে অথবা জামিন অযোগ্য কোনো অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে, সেই ধরনের অপরাধী আগাম জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন না। ওয়াদুদ বনাম রাষ্ট্র (২০০৭) নামক অপর একটি মামলাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আইনি হেফাজতে থাকে তাহলে তিনিও আগাম জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন না। তাকে মূলত সাধারন জামিন প্রদান করা হয়ে থাকে।
যদি পুলিশ রিপোর্ট সাবমিট করা হয়ে থাকে তাহলে আগাম জামিনের স্কোপ থাকে না। মূলত আগাম জামিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেয়া হয়ে থাকে। সেটা হতে পারে চার্জশিট দাখিলের পূর্ব পর্যন্ত। চার্জশিট দাখিলের পর আগাম জামিনে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আদালতের সামনে হাজির হতে হবে এবং নতুন করে প্রচলিত জামিন চাইতে হবে।

আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় সমূহ
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আগাম জামিন দেয়া হবে কি না, তা নির্ভর করে প্রতিটি মামলার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্টের উপর। শুধুমাত্র কোনো ব্যক্তি এমন কোনো অপরাধ করেছে যার শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এটা আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে বাঁধা হতে পারেনা। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৮ আদালতকে আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে অনলিমিটেড ক্ষমতা প্রদান করেছে। কোন ব্যক্তিকে আগাম জামিন প্রদান করা হবে কি না, তা কোর্টের বিবেচনার বিষয়। তবে এই ক্ষমতা আদালত অবশ্যই বিবেকহীন এবং অসার কোনো আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন না। শুধুমাত্র সাধারন আইনি প্রক্রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেকেই আগাম জামিনের আবেদন করে থাকেন। আদালত এই সকল ক্ষেত্রে জামিন প্রদান করবেন না।
রাষ্ট্র বনাম মোরশেদ হাসান খান (২০১৯) মামলায় জাস্টিস হাসান ফয়েজ সিদ্দিক বলেন, আগাম জামিন প্রদান অথবা আগ্রাহ্য করার ক্ষেত্রে কোনো শক্ত গাইড লাইন নেই। তবে কিছু নীতি অনুসরন করে আগাম জামিন প্রদান অথবা অগ্রাহ্য করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাখিল হওয়া ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (এফআইআর) খুব গুরুত্বের সাথে এবং সাবধানতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অভিযোগের গুরুত্ব এবং সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির যথাযথ ভূমিকা কি ছিলো, তা পুরোপুরি ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
যদি অভুযুক্ত ব্যক্তিকে আগাম জামিন প্রদান করা হয় তাহলে সে পালিয়ে যাবে কি না, মুক্ত হয়ে প্রমাণাদি জালিয়াতি করার চেষ্টা করবে কি না, অথবা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাবে কি না এই বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। অনেক সময় হেনস্তা করার জন্য এবং সামাজিকভাবে একটি পরিবারকে হেয়োপ্রতিপন্ন করার জন্য প্রতিপক্ষ মামলা দিতে পারে। এই ধরনের বিষয়গুলো নজরে রাখতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির চরিত্র, ব্যবহার, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় নিতে হবে আগাম জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে।
আগাম জামিন যেহেতু আদালতের বিবেচনার বিষয়। আদালতকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আগাম জামিন যেন খেয়াল খুশি মতো প্রদান করা না হয়। আগাম জামিন যেন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রদান করা না হয়। আগাম জামিন প্রদানের সময় অবশ্যই আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করবেন যেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তদন্ত অফিসারকে সহযোগিতা প্রদান করে। সাধারনত আগাম জামিন দুই মাসের জন্য হয়ে থাকে। তবে চার্জশিট দাখিল হয়ে গেলে আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। যেই আদালত আগাম জামিন প্রদান করে থাকে, সেই আদালতের আগাম জামিন বাতিলের এখতিয়ার আছে।
কখন জামিন বাতিল হয়ে থাকে?
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ধারা ৪৯৭(৫) অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি জামিন অযোগ্য কোনো অপরাধ করেন এবং আদালত থেকে জামিনে মুক্ত থাকেন সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট, কোর্ট অব সেশনস বা, যেই কোর্ট উক্ত ব্যক্তিকে জামিন প্রদান করেছেন সেই কোর্ট পুনরায় জামিনে মুক্ত ব্যক্তির জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারেন। মহাসিন আলী বনাম রাষ্ট্র (২০০৩) মামলাতে বলা হয়েছে জামিন বাতিলের ক্ষেত্রে কোর্টকে অবশ্যই দেখতে হবে জামিন দেয়ার কারনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার কাজের গুরুতর ক্ষতি কিংবা কোর্টের প্রসেস কে অপব্যবহার করেছে কি না। যদি এমনটি করে থাকে তবেই জামিন বাতিল করা যাবে। অনেক সময় বিচার প্রক্রিয়া থেকে বাঁচতে অপরাধী জামিন চেয়ে থাকে। এইসব সময়ে জামিন প্রদান করা হয়ে থাকলে অবশ্যই জামিন বাতিল করার সুযোগ আদালতের আছে।
একই মামলাতে আরো বলা হয়েছে, কোর্টে অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তির জামিন কোর্ট নিজে থেকে বাতিল করতে পারেনা, যদি না অন্য কোনো ব্যক্তি জামিন বাতিলের আবেদন করে থাকে। খায়ের ফকির বনাম রাষ্ট্র (১৯৮৩) মামলাতে বলা হয়েছে, জামিন একজন নাগরিকের মূল্যবান অধিকার। কোনো সাধারন কারনে তা বাতিলযোগ্য নয়। গুরুতর কারন ছাড়া নাগরিকের জামিন বাতিল করা উচিত না। জহিরুল হক তাঁর ‘ল এন্ড প্রাক্টিস অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর’ বইয়ে বলেছেন, কয়েকটি উপসর্গ দেখে কোর্ট একজন ব্যক্তির জামিন বাতিল করতে পারে। সেগুলো হলো —
- জামিনে মুক্ত ব্যক্তি যদি একই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি করে থাকে।
- যদি উক্ত ব্যক্তি তদন্তে বাধা প্রদান করে।
- যদি উক্ত ব্যক্তি প্রমাণাদি টেম্পারিং করে থাকে।
- যদি উক্ত ব্যক্তি বিচার থেকে দূরে থাকার জন্য পলায়ন করে।
- যদি উক্ত ব্যক্তি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটায়।
কে জামিন বাতিলের আবেদন করতে পারে?
মহাসিন আলী বনাম রাষ্ট্র (২০০৩) মামলায় হাইকোর্ট ডিভিশন তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মূলত জামিন বাতিলের আবেদন করার অধিকার প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রের। তবে উভয় পার্টি যদি প্রাইভেট হয়, সেক্ষেত্রে তারাও জামিন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।