পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। এই রায়ের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়। পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোটের যে বিধান তাও পুনঃপ্রবর্তিত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
এছাড়াও ১৫ তম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা ৭ক এবং ৭খ ধারাও আদালত বাতিল ঘোষণা করেন। ৭ক ধারা মূলত অবৈধভাবে বা, অসাংবিধানিক উপায়ে কেউ যদি সংবিধান রদ, বাতিল বা, স্থগিত করে কিংবা চেষ্টা করে তবে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল হবে। ৭খ ধারার মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ এবং পরিশিষ্টকে ব্যাসিক স্ট্রাকচার বলে অভিহিত করা হয়েছিলো যা সংশোধন কিংবা বাতিল করার ক্ষমতা সংসদের ছিলোনা। যা সরাসরি সাংবিধানিক বিধি বিধান এবং নীতির সাথে সাংঘর্ষিক ছিলো।
এছাড়াও আদালত সংবিধানের ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করেছেন। উক্ত অনুচ্ছেদের মাধ্যমে রিট আবেদনের শুনানির এখতিয়ার হাইকোর্ট বিভাগের পাশাপাশি সরকার মনে করলে অন্য যেকোনো আদালতকে দিতে পারতেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণতন্ত্র: পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল হচ্ছে। তবে এই সংশোধনীর মাধ্যমে আনা অন্যান্য পরিবর্তন গুলো সংশোধন, পরিমার্জন এবং বাতিলের সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকার নিবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্রয়োদশ সংশধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। যে কারণে এটি সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি হয়ে গিয়েছে। কোর্ট আরো বলেন পঞ্চদশ সংশধোনীর মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিলো। সংবিধানের মূল কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। সংবিধানের সৌন্দর্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
পঞ্চদশ সংশোধনী: ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতির পিতার বিধান বহাল
এই রায়ের মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশধনী আংশিক বাতিল হওয়ার কারনে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন যা পঞ্চদশ সংশধোনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিলো, তা বহাল থাকছে। ধর্মনিরপেক্ষতার যে নীতি তা মূলত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে পুনরায় যুক্ত করা হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ছিলো। যা পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয় এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি যুক্ত করা হয়। উল্ল্যেখ্য অষ্টম সংশধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে যুক্ত করেন। যা ঈষৎ পরিবর্তন করা হলেও পঞ্চদশ সংশধোনীর মধ্যমে বহাল রাখা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল হওয়াতে, অনুচ্ছেদ ৪ক এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এখনো বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবেই থাকছেন। ফলে তাঁর পোট্রেট রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি সহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস গুলোতে প্রদর্শন করার বিধান বহাল থাকছে। উল্ল্যেখ্য, ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর ছাত্র নেতারা বঙ্গবন্ধুর ছবি সমস্ত সরকারি অফিস থেকে নামিয়ে ফেলতে আহবান জানান। বর্তমানে উপদেষ্টারা তাঁদের অফিস থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলেই অফিস করছেন। একই সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়করা মুজিববাদের বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়াও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া পরস্পর বিরোধী সংবিধানের চারটি মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ বহাল থাকছে।
রিটের পক্ষগণ
উল্ল্যেখ্য, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। পরবর্তী সময়ে বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়েত ইসলামীর সেক্রেটার জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার উক্ত রিটের পক্ষভুক্ত হন।