Saturday, April 26, 2025

আইন ও বিচার: জানুয়ারি ২০২৫-এর গুরুত্বপূর্ণ আপডেট

আইন ও বিচার

Share

আইন ও বিচার অঙ্গনে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে নানা ঘটনা। নানা ব্যস্ততায় সব ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে সচেতন নাগরিক হিসেবে আইন অঙ্গনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে আমাদের অবগত থাকা প্রয়োজন। এই কাজে আপনাদেরকে সহযোগিতে করার জন্যই জানুয়ারি মাসে আইন ও বিচার অঙ্গনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে একত্র করে এই আর্টিকেল।

পিলখানা হত্যাকান্ডঃ হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামীদের বিষ্ফোরক মামলায় জামিন
Photo Credit: Collected

পিলখানা হত্যাকান্ডঃ হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামীদের বিষ্ফোরক মামলায় জামিন

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে এক নারকীয় হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। এতে দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসার সহ মোট ৭৪ জন্য প্রাণ হারান। জাতির ইতিহাসে এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করে। একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিষ্ফোরক আইনে মামলা। মামলাগুলোতে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিডিআর সদস্যরা জেলে বন্দী অবস্থায় ছিলেন।

হত্যা মামলার রায়ে নিম্ন এবং উচ্চ আদালত থেকে প্রায় ২৫৮ জন খালাস পান। কিন্তু বিষ্ফোরক আইনের মামলাতে আসামী হবার কারনে তারা এতদিন জামিন পাননি। অবশেষে বিষ্ফোরক মামলা থেকেও খালাস পাওয়াতে তারা আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন প্রদান করেন। ১৯ জানুয়ারি প্রায় ২৫০ জনকে জামিন প্রদান করা হয়। ২৩ জানুয়ারি তারা জেল থেকে মুক্তি পান। উল্লেখ্য দেশের আইন ও বিচার অঙ্গনে এটিই ছিলো সবচেয়ে বড় বিচারিক মামলা।

শেখ হাসিনা সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে হওয়া গুমের বিচার শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। গত ৬ জানুয়ারি উক্ত ট্রাইবুন্যাল শেখ হাসিনা সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ এবং বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যাল এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

সাইবার সিকিউরিটি আইনের মামলায় খালাস পাবেন ৯৫ শতাংস আসামি

বিগত আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে সাইবার সিকিউরিটি আইন অপব্যবহার করে ভিন্নমত দমন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হয়রানি করা হয়। অনেক কিশোরকেও এই আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয় ফেসবুকে ভিন্নমত প্রকাশ করার জন্য। এই আইনের অধীনের বেশির ভাগ মামলা হয়রানিমূলক হওয়াতে তা ব্যপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অনেক এক্টিভিস্ট এই আইন বাতিলে জন্য দাবি তোলেন। অবশেষে গত ২২ জানুয়ারি আইসিটি নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ফাইয়াজ আহমেদ তৈয়্যব এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন এই আইনের অধীনে হওয়া ৯০-৯৫% আসামি খুব দ্রুত খালাস পাবেন

উল্ল্যেখ সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফাইয়াজ আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমসহ সব পেশাজীবীর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দিবে নতুন অধ্যাদেশ। তবে, চারটি অপরাধকে রাখা হয়েছে জামিন অযোগ্য হিসেবে।’ আইন ও বিচার নিশ্চিত করণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে।

অভিন্ন শ্রম আইন প্রণয়নে সুপারিশ

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ কর্তৃক আয়োজিত ‘শ্রমিকের জীবনমান, কর্মপরিবেশ ও অধিকারসংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগ : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রস্তাবনা’ বিষয়ক একটি সভায় প্রস্তাব করা হয় দেশের সকল শ্রমিকদের জন্য অভিন্ন শ্রম আইন প্রণয়নের। একই সাথে শ্রমিকদের জন্য অভিন্ন মজুরি কাঠামো গড়ে তোলারও সুপারিশ করা হয়।

আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি দেশের ৮৫ শতাংশ বা প্রায় ছয় কোটি শ্রমিকের কোনো আইনি সুরক্ষা ও মজুরির মানদণ্ড না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন।

ন্যায় বিচারের স্বার্থে হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে ভারত!
Photo Credit: Collected

ন্যায় বিচারের স্বার্থে হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে ভারত!

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতন হয়। সেদিনই তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত ইন্টেরিম সরকার বিগত ১৫ বছরে চলা গুম-খুন সহ জুলাই ম্যাসাকারে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচার শুরু করে। ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, ভারত কি হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে?

এই বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেন, ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে বন্দি বিনিময় চুক্তি লঙ্ঘন হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন বাংলাদেশের দেওয়া প্রত্যর্পণের চিঠির ইতিবাচক জবাব দিয়ে সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে ন্যায়ের পক্ষ নিয়ে ভারত শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাবে।

মাদক মামলায় যুবলীগের সম্রাটের বিচার শুরু

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এসময় বিদেশি মদ, পিস্তল ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পরবর্তি সময়ে ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা মাদক আইনের মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হলো। ৩০ জানুয়ারি ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেন। আদেশে তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন পরীমনি

মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। উক্ত মামলাটি দায়ের করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। ২৬ জানুয়ারি আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। অনুপস্থিত থাকার কারনে আদালত পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ২৭ জানুয়ারি তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করে।

Table of Contents

Read more

Related Posts

Join our community of SUBSCRIBERS and be part of the conversation.

To subscribe, simply enter your email address on our website or click the subscribe button below. Don’t worry, we respect your privacy and won’t spam your inbox. Your information is safe with us.

32,111

Followers

32,214

Followers

11,243

Followers