মালঞ্চ উপন্যাস পাঠের অনুভূতি
মালঞ্চ উপন্যাসটি পড়ে আমি মুগ্ধ হলাম। মালঞ্চ শব্দের অর্থ ফুলের বাগান। নীরজা তার সস্নেহে গড়া ফুলের তথা সংসার জীবনের বাগানে অন্য কোন আগন্তুকের অনুপ্রবেশ মেনে নিতে পারেনি। হয়ত সে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত জীবন আর ঠিক করতে পারেনি। কবিগুরুর অন্যান্য সৃষ্টিকর্মের মত, এতেও প্রকৃতির সাথে মানব চরিত্রের, সম্পর্কের এক চমৎকার মেলবন্ধন রয়েছে।
প্রধান চরিত্রসমূহ
উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো হচ্ছে—নীরজা, আদিত্য, সরলা, রমেন, রোশনী প্রমুখ। অনেকটা ত্রিভুজ প্রেমের উপন্যাস বলা চলে। মৃত্যুশয্যাশায়িনী জীবন তৃষিত নীরজার স্বামীর ওপর অধিকার রক্ষার অসহায় সংগ্রাম, স্বামীর প্রতি তার অনুদার সন্দেহ, ফুল বাগানের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার করুণ আগ্রহ এবং তার ট্র্যাজিক পরিণতি অঙ্কন এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
উপন্যাসের মূল কাহিনি
পরম সুখে ১০ বছর কেটেছে আদিত্য-নীরজার সংসার। তাদের ভালোবাসা পরস্পরের প্রতি অনুগত ও বিশ্বাসে ভরা ছিল। কিন্তু হঠাৎ নীরজার দুরারোগ্য ব্যাধি তাদের আনন্দ ও জীবনস্রোতে সৃষ্টি করে অসহনীয় যন্ত্রণা। কারণ, সংসারে তখন আদিত্যের দূরসম্পর্কের বোন সরলাকে আনা হয় বাগানের সহযোগিতার জন্য। এ থেকে আদিত্য ও সরলাকে নীরজা সন্দেহ করতে থাকে। যদিও সরলা নিজের সম্পর্কে অটুট, তবুও অসুস্থ নীরজা স্বামীর প্রতিও নানারূপে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে।
নীরজার মানসিক দ্বন্দ্ব ও পরিণতি
মৃত্যুশয্যাশায়িনী নীরজার অক্ষমতা ও অচরিতার্থ জীবনতৃষ্ণা থেকে জন্ম নেয় ঈর্ষা, সন্দেহ। নীরজার নিঃসঙ্গ শূন্য ঘরের একমাত্র সঙ্গী রোশনী, হৃদয়ের গুরুভার, ঈর্ষা, সন্দেহ, আত্মযন্ত্রণা হালকা করার একমাত্র স্থল। নীরজার মনে কঠোর দ্বন্দ্ব চলেছে—যে পরাজয়কে সে একান্ত মনে গ্রহণ করতে পারেনি, যে ত্যাগ তার পক্ষে অবশ্যম্ভাবী, তা সহজ করে নিতে সে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, কিন্তু মৃত্যুর দ্বারেও তার স্বাধিকারসত্তা অটুট ছিল। এ উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠায় বর্ণিত তার মৃত্যুযন্ত্রণা বড় হৃদয়বিদারক।
উপন্যাসের সাহিত্যিক বিশ্লেষণ
সবকিছু মিলিয়ে পুরো উপন্যাসে কাব্যিকতা, নাটকীয়তা ও সুন্দর উপমার প্রয়োগে উপন্যাসটি সার্থক হয়ে উঠেছে। প্রতিটি চিত্রের মধ্যে রূপ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ একীভূত হয়ে আমাদের আবিষ্ট করে। সব মিলিয়ে মালঞ্চ উপন্যাস একটি অসাধারন অনুভূতির সঞ্চার করবে পাঠক হৃদয়ে।